শরীরের জন্য ড্রাগন ফল খুব উপকারি। ড্রাগন ফলের চমকপ্রদ ১৭টি উপকারিতা

আকারে অনেকটা দেখতে রূপকথার ড্রাগন এর পিঠের মত হয় এর নামকরণ করা হয়েছে ড্রাগন ফল।
ড্রাগন ফল প্রথমে বিদেশে চাষ হলেও বাংলাদেশে এখন এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক হারে। বাংলাদেশের চাহিদা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে বাংলাদেশে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ।

বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে অনেকে সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছেন এর চাহিদার কারণে।
ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাবার কারণ হচ্ছে এর পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা গুলো । পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় এটি শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করছে এবং এটি শরীরে জন্য নানা উপকারিতা বয়ে আনছে।

আজ আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করতে যাচ্ছি ড্রাগন ফলের এমন কিছু উপকারিতা যা হয়তো আপনারা আগে জানতেন না।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো জানার পর আশা করছি আপনারা অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ড্রাগন ফল জায়গা করে দিবেন।

চলো আমরা আজকে জেনে নি ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো।

ড্রাগন ফলের উপকারিতাঃ

১। হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ

ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো আমাদের হার্টকে ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর । ড্রাগন ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল মাধ্যমে হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে উচ্চ রক্তচাপ এবং হূদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমায় ।
তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খাবারের মাধ্যমে আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ।

২। ফুস্ফুস ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ

ড্রাগন ফল শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে । যার ফলে আমাদের ফুসফুস ভালো থাকে । তাই ফুসফুসের মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কে ভালো রাখার জন্য আমরা নিয়মিত ড্রাগন ফল আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।

৩। ওজন কমিয়ে আনেঃ

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের ওজন কমিয়ে ভালো কাজ করে যাও ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যেটি আমাদের শরীরের ওজন কমিয়ে আনে। এছাড়াও ড্রাগন ফল অতিমাত্রায় ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমাদের হজমক্রিয়াকে ঠিক রাখে যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে । ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ৮০ শতাংশ পানি যার কারণে এই ফল খেলে ওজন বেড়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা।

যারা খুব সহজে কোন কষ্ট ছাড়াই নিজেদের ওজনকে কমিয়ে ফেলতে চান তারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ড্রাগন ফল কে রাখতে পারেন ।

৪। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাধে তার মধ্যে একটি কমন রোগ হলো ডায়াবেটিস । ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাময় রোগ থেকে আমাদের মুক্তি পাবার জন্য সবসময় সতর্ক থাকা উচিত।

আর আঁশযুক্ত খাবার আমাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ কি স্থিতিশীল সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবার আমাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে যার কারণে ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ।

ড্রাগন ফল একটি উচ্চ পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায় এটি আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ সাহায্য করে। যারা শুধুমাত্র খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চান তারা নিজেদের খাদ্যতালিকায় ড্রাগন ফলকে যুক্ত করে নিতে পারেন ।

৫।কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ

মানুষের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ফাইবারের প্রয়োজন হয় একটি পরিপক্ক ড্রাগন তার চার ভাগের এক ভাগ পূরণ করে। তাই আমাদের শরীরে প্রতিদিন ফাইবারের যে চাহিদা রয়েছে সেই ফাইবার গুলো আমরা ড্রাগন ফল খাবারের মাধ্যমে পেতে পারি ।
ফাইবার আমাদের শরীরের অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সাহায্য করে থাকে । যার কারণে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর হয় । তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা ড্রাগন ফল নিজেদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন । এতে আমাদের শরীর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হবে এবং শরীরে ফাইবারের চাহিদা পূরণ হবে ।

৬। হজমে সহায়তা করেঃ

আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা আমাদের শরীরে হজমে সহায়তা করে । ড্রাগন ফলের মধ্যে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের শরীর বদহজমকে দূর করে দিয়ে আমাকে হজম প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখে। শরীরের হজমক্রিয়াকে ঠিক রাখার জন্য ড্রাগন ফলকে আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি ।

৭। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ

আমাদের শরীরে অনেক ধরনের রোগ হয় এবং আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এই সকল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদেরকে সুস্থ করে তোলে। কিন্তু ক্যান্সার এমন একটি রোগ যেটি হবার পর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায় যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার বাসা বাধলে এটি ভালো হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ হয়ে আসে। তাই আমাদের সবার উচিত আমাদের শরীরে যেন ক্যানসারের মত মরণব্যাধি রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধতে না পারে সেদিকে অনেক বেশি সচেতন থাকা ।

ড্রাগন ফলের মধ্যে ক্যারোটিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যেটি আমাদের শরীর হতে টিউমার ধ্বংস করার জন্য কাজ করে থাকে । এটি শরীরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যার কারণে ড্রাগন ফল খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

৮। বয়সের ছাপ দূর করেঃ

আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করার জন্য যে উপাদানটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমরা প্রতিদিন যে সকল খাবার গ্রহণ করে তাকে তার মধ্যে যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে আমাদের ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায় এবং ত্বক হবে মসৃণ এবং টানটান ।

ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।তাই ড্রাগন ফল খেলে আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ হবে যার কারণে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর হয়ে ত্বক সবসময় ইয়াং থাকবে ।

৯। চুলপড়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেঃ

আমাদের শরীরে যে সকল কারণে চুল পড়ে যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি থাকা। ড্রাগনের ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যেটি আমাদের চুল পড়া প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুল পড়া সমস্যা দূর হয়ে যাবে ।

১০। রক্ত চলাচল ঠিক রাখেঃ

আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করা ড্রাগন ফল খুব ভালো কাজ করে । এটি শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

১১। কোলেস্ট্রোরেল কমিয়ে আনেঃ

ড্রাগন ফল খাবার অভ্যাস আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কতটুকু কমিয়ে আনে এই নিয়ে একটি রিচার্চ এ দেখা গেছে যারা প্রতিদিন একটি করে ড্রাগন ফল খেয়েছেন তাদের শরীরের ৪.৪ শতাংশ কোলেস্টরলের কমেছে এবং যারা দুটি করে ড্রাগন ফল খেয়েছেন তাদের শরীরে ৯.৪ শতাংশ ।

শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য ড্রাগন ফল অত্যন্ত কার্যকরী একটি খাবার ।

১২। কোলেস্ট্রোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

ড্রাগন ফল আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর সাথে সাথে এটি সঠিক মাত্রায় শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে এবংভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

১৩। হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ

ড্রাগন ফলে আমাদের হারকে মজবুত রাখার জন্য অনেক ভালো কাজ করে এটি হাড়ের স্বাস্থ্য কে রাখে।

১৪। জয়েন্টের ব্যথা কমিয়ে আনেঃ

আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের জয়েন্টে ব্যাথা বেড়ে যায় এ ব্যাথা কমানোর জন্য অনেকে অনেক প্রকার ওষুধ নিয়ে থাকে। তবে ওষুধ ছাড়া জয়েন্টে ব্যাথা কমানোর জন্য ড্রাগন ফল খেতে পারেন । ড্রাগন ফল শরীরের জয়েণ্টের ব্যথা কমিয়ে আনতে অনেক ভালো কাজ করে । নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে শরীরের ব্যথা কমে যাবে। প্রাকৃতিক ভাবে শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য আপনারা ড্রাগন ফল খান।

১৫। আয়রনের ঘাটতি পূরণ করেঃ

নারীদের মধ্যে যে সকল কমন সমস্যা দেখা যায় তারমধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো আয়রনের ঘাটতি হওয়া। আয়রনের ঘাটতি নারীদের সহ সারা বিশ্বে অতি পরিচিত একটি পুষ্টি ঘাটতি ।বেশির ভাগ সময় মাছ , মাংস, ডাল, বাদাম এইসব খাবার থেকে আমরা আয়রন গ্রহণ করে থাকে।

শুধুমাত্র কিছু ফলের কাছ থেকে এই আয়রন পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হলো ড্রাগন ফল ।

আমরা যদি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফল খাই তাহলে এর মধ্য হতে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন আমরা পাই । যেটি আমাদের শরীরে প্রতিদিনের আয়রনের চাহিদার ১০ ভাগ পূরণ করে ।

তাই আমাদের শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে হয় আমরা অনেকগুলো খাবারের সাথে ড্রাগন ফল রাখতে পারি । এটি খুব অল্প পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরে ব্যাপকভাবে আয়রনের চাহিদা পূরণ করবে।

১৬। রক্ত শূন্যতা দূর করেঃ

আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে যে প্রধান উপাদান ব্যবহৃত হয় সেটি হচ্ছে আয়রন । আমরা এর মধ্যে জেনে গেছি ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য । যার ফলে আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর হয়। তাই বলা যায় ড্রাগন ফল আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর করার খুব ভালো উৎস।

১৭। গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ

ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের অনেকগুলো সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করে। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেকগুলো উপকারিতা বলে আমার সাথে সাথে এটি গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাজ। ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকে ফাইবার গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং এটি গর্ভবতী মায়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। গর্ভবতী মায়েরা নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ড্রাগন ফল খেতে পারেন

বন্ধুরা আপনাদের সাথে ড্রাগন ফলের অনেকগুলো উপকারিতা শেয়ার করলাম। আপনারা উপকারিতাগুলো পাবার জন্য নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

Leave a Comment