জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই জানি রাতে ঘুমাবার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করলে নিদ্রাটা হয় শান্তির এবং স্বস্তির। তবে এর সাথে যদি এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে এটি আশ্চর্যজনকভাবে অনেকগুলো উপকারিতা দিয়ে থাকে।
আজ আমি আপনাদের সাথে সেইসব উপকারিতা গুলো শেয়ার করবো যেগুলো দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় ।
তবে তার আগে আমরা জেনে নিব
জাফরান কি?
ইংরেজিতে Saffron বলা হয় এবং বাংলায় বলা হয় জাফরান ।
এটি মূলতএটি একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদের ফুলের কেশর । বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দামি মসলা হলো জাফরান ।

জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতাঃ

দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে যেসকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় তা হচ্ছে
১। খুব ভালো ঘুমের সহায়কঃ
প্রতিদিন ঘুমাবার আগে যদি জাফরান দুধ খাওয়া যায় তাহলে এটি আমাদের ঘুমের জন্য অনেক ভালো সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে তারা তাদের ঘুমকে ভালো করার জন্য অর্থাৎ দিনের কাজ কর্ম শেষে একটি ভালো শান্তিময় ঘুমের জন্য আপনারা এক গ্লাস জাফরান দুধ খেতে পারেন।
২। হজমশক্তি বাড়ায়ঃ
জাফরান আমাদের শরীরের হজম শক্তি কে বাড়িয়ে তোলে । তাই যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ খেলে তাদের এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৩। স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে তোলেঃ
প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ আমাদের স্মৃতিকে আরো বেশি প্রকর করে তুলবে। তাই যাদের অল্পতেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে অথবা যারা পড়াশোনাকে অনেক বেশি মনে রাখতে চান তাদেরকে প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ অনেক বেশি সহায়তা করবে ।
৪। ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করেঃ
জাফরানের অনেকগুলো উপকারিতার মধ্যে একটি উপকারী তা হলো এটি ত্বকের রং উজ্জ্বল করার জন্য অনেক বেশি সহায়তা করে । আর তরল দুধ ত্বক ফর্সা করার জন্য সহায়তা করে। যখন এই দুটি উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে তখন এটি আশ্চর্যজনকভাবে ফলাফল দেয়। প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ কত দ্রুত যে ত্বকের রং উজ্জ্বল এবং ফর্সা করে তা আপনারা ভাবতেও পারবেন না ।
৫। চুলের সৌন্দর্য মনে করে তুলেঃ
যাদের চুল খসখসে রুক্ষ শুষ্ক তারা প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ খাওয়ার পর দেখতে পাবেন আপনাদের চুলের রুক্ষতা দূর হয়ে গেছে । তার সাথে সাথে চু অনেক বেশি সুন্দর ও ঝলমলে হয়ে যাবে।
৬। শরীরের ব্যথা দূর করেঃ
অনেকের শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়ে যায় । জাফরান এ ব্যাথা দূর করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। এছাড়াও সন্তান জন্মদানের পর প্রতিটি নারীর শরীরে অনেক বেশি ব্যাথা বেড়ে যায় । এই সময় ব্যাথা কমানোর জন্য প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস জাফরান দুধ অনেক বেশি সহায়তা করবে । এটি প্রাকৃতিক পেইনকিলারের কাজ করবে। সন্তান জন্মদানকারী মা অথবা যে কেউ শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন।
৭। হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে কাজ করেঃ
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হৃদযন্ত্র। এটি খারাপ থাকলে ধরে নেয়া হয় আমাদের শরীর পুরোপুরিভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছে । আর জাফরান দুধ হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে অত্যন্ত কার্যকর ।
৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
আমাদের অনেকের উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে । উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ কোনটাই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নয় । এই দুই রক্তচাপে আমাদেরকেও সুস্থ করে দেই। এক গ্লাস জাফরান আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৯। গর্ভবতী মায়েদের মুড সুইং ঠিক রাখেঃ
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে কাটে। এই সময় দুশ্চিন্তার কারণে তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো বিনা কারণেই তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাই বলা যায় গর্ভাবস্থায় একটি নারীর সবচেয়ে বেশি মুড সুইং হয়ে থাকে অর্থাৎ মেজাজ আপ এবং ডাউন হতে থাকে।
যদি জাফরান দুধ নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে জাফরানের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো শরীরে সেরোটোনিন নামের একটি হরমোন সৃষ্টি করে। সেরোটোনিন নামের এই হরমোনের কাজ হলো শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখা । এটি রক্তসঞ্চালন ঠিক রেখে মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই জাফরান দুধ গর্ভবতী মায়েদের মুড সুইং ঠিক রাখার জন্য সহায়তা করে ।
কিভাবে তৈরি করবেন জাফরান দুধঃ
অনেকেই জাফরান দুধ খেতে চাইলেও এটি তৈরি করার সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে জাফরান দুধ খেতে পারে না তাই এখন আমি আপনাদেরকে জাফরান দুধ বানানোর সঠিক পদ্ধতি টা শেয়ার করছি
যা যা লাগবে-
১ গ্লাস খাঁটি গরুর দুধ
১ চিমটি জাফরান এবং
১ চা চামচ অরগানিক বা খাঁটি মধু
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
১। সবার প্রথমে গরুর দুধ একটি পাত্রে নিয়ে এটিকে খুব ভালো করে সেদ্ধ করে নিন ।
২। এটি সেদ্ধ করার পর এর মধ্যে জাফরান দিয়ে আরও দুই থেকে তিন মিনিট সেদ্ধ করে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন।
৩। দুধ যখন খুব বেশি গরম থেকে কুসুম গরম হয়ে আসবে তখন এটি একটি গ্লাসের মধ্যে ঢেলে নিন এবং এর সাথে যোগ করে নিন। এর সাথে মধু যোগ করার পর খুব ভালোভাবে চামচ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নেবেন।
৪। এরপর এটি রা কুসুম গরম থাকতেই খেয়ে নিন অর্থাৎ এটিকে আপনারা চায়ের মতো করে খাবেন । ঠাণ্ডা অবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয় এটি কুসুম গরম থাকতেই খাওয়া উপকারী ।
জাফরান দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ
জাফরান দিনের চেয়ে রাতে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। অর্থাৎ রাতে ঘুমাবার আগে এক গ্লাস জাফরান দুধ পান করে ঘুমিয়ে গেলে এর সমস্ত উপকারিতা এবং কার্যকারিত গুলো খুব ভালোভাবে পাবেন।
সতর্কতাঃ
১। আগেই আপনাদের জানিয়েছেন জাফরান অনেক দামী একটি মসলা । তাই বাজারে কম দামের জাফরান কিনতে গিয়ে ভেজাল জাফরান কিনবেন না।
আপনারা ভালো মানের জাফরান সংগ্রহ করার জন্য যেকোনো সুপারশপে যেতে পারেন।
২। জাফরান দুধ তৈরি করার জন্য বাজারের পাস্তুরিত দুধ গুলো ব্যবহার না করাই ভাল। আপনারা চেষ্টা করবেন খাঁটি গরুর দুধ ব্যবহার করার জন্য।
৩। জাফরান দুধ তৈরি করার জন্য মধুটি অপশনাল আপনারা যদি অর্গানিক মধু অর্থাৎ খাটি মধুর না পান তাহলে জাফরান তৈরিতে ব্যবহার করা বাদ দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনারা মধুর পরিবর্তে কোন ধরনের চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোন পদার্থ ব্যবহার করবেন না।
৪। আর আপনারা যদি মধু ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই বাজার থেকে খাটে মানের মধু সংগ্রহ করবেন।
৫। জাফরান দুধ গরম গরম থাকতেই খাবেন । এটি ঠাণ্ডা করে খেলে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না ।
বন্ধুরা আপনারা তো সবাই জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নিলেন আপনারা এই উপকারিতাগুলো পাবার জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস জাফরান দুধ খেতে পারেন।

Leave a Comment