জলপাইয়ের উপকারিতা ও গুণাগুণ

শীতকালে যে সকল খাবার আমাদের খুব বেশী প্রিয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আচার। হ্যাঁ বন্ধুরা, যার কথা শুনলে আমাদের জিভে জল চলে আসে। সব ধরনের আচারের মধ্যে শীতকালে সবচেয়ে প্রিয় আচার হচ্ছে জলপাইয়ের আচার।

যার কারণে শীতকালের জলপাইয়ের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা তাকে অনেক তুঙ্গে। কিন্তু শুধুমাত্র জলপাই আচার হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। জলপাইয়ের রয়েছে আরও অনেক ধরনের ভেষজ গুণাবলী যা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব জলপাইয়ের বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে।

জলপাই এর ভেষজ গুণাবলীঃ 

শীতকালে পাওয়া ফলগুলোর মধ্যে জলপাই অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং টক জাতীয় ফল। জলপাই থেকে তেল তৈরি করা হয় যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। জলপাইয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই।

এছাড়াও জলপাইয়ের তেল এ অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে যা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। পাশাপাশি জলপাই গাছের পাতার মধ্যে থাকে সাইট্রিক এসিড ও ট্যানিন এসিড।

জলপাই এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জাতীয় উপাদানঃ

প্রতিটি জলপাইয়ে রয়েছে খাদ্য শক্তি ১৪৬ কিলোক্যালরি, শর্করা রয়েছে ১৬.২ গ্রাম, আরো আছে আঁশ ৩.৩ গ্রাম, আমিষ এর পরিমান ১.০৩ গ্রাম, এসবের পাশাপাশি জলপাই এর মধ্যে আরো পাওয়া যায় ভিটামিন-ই ৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে-১.৪ আইইউ, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫২.০০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম।

একটি ফলের মধ্যে এত ধরনের উপাদান থাকার কারণে জলপাই খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা দেখে আমরা দূরে থাকতে পারি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

হজমের সমস্যা সমাধানে জলপাইয়ের উপকারিতাঃ

যাদের হজমে সমস্যা আছে বা গ্যাস্ট্রিক এ প্রবণতা দেখা যায়, খাবার খেলে ভালোভাবে হজম হয় না, তারা খাবারের সাথে জলপাইয়ের আচার রাখতে পারেন। কারন জলপাই এর মধ্যে থাকা ফাইবার বা আঁশ আমাদের খাবার হজমে গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা রাখে। যা আমাদের পেটে মর তৈরি করতে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কাজ করে।

হৃদপিন্ডের কার্যাবলী স্বাভাবিক রাখতে জলপাই এর ভূমিকাঃ

জলপাই এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের শরীরের লাইপোপ্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে আমাদের হাটকে সচল রাখার কাজ করে থাকে। তাই যারা হার্টের রোগী আছেন তারা খাবারের তালিকায় অন্যান্য খাবার রাখার পাশাপাশি জলপাই রাখতে ভুলবেন না।

গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে জলপাই তেলের উপকারিতাঃ

যাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে অথবা গ্যাস্ট্রিকের প্রবণতা যাদের বেড়ে যায়, পাশাপাশি যাদের শরীরে আইবিএস এর মতো সমস্যা রয়েছে, তারা স্বাভাবিক সয়াবিন তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল এর মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি পরিমাণে উপকারী।

ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধেঅথবা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে জলপাই তেলের উপকারিতাঃ

জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল আমাদের শরীরে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কাজ করে। পাশাপাশি অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি করা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের খুব সহজে হজম হয়। এবং আমাদের কোলন ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।

সুন্দর ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের উপকারিতাঃ

সুন্দর, ঝরঝরে, উজ্জল, ঘন কালো চুল পেতে আমরা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি। তার পাশাপাশি যাদের ত্বকের চামড়া কুচকে গেছে, বা ফাটল সৃষ্টি হয়েছে অথবা বলিরেখা দেখা যাচ্ছে তারা অলিভ অয়েল মাসাজ করতে পারেন। বিশেষ করে বাচ্চা প্রসবের পরে যাদের তলপেটে বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায় ওই স্থানে আপনারা অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে দ্রুত এর পরিত্রান পেতে পারেন।

অন্যান্য সমস্যা সমাধানে জলপাইয়ের উপকারিতাঃ

এছাড়াও আরো বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জলপাই আমাদের উপকার করে থাকে। যেমন যাদের মাথায় উকুন এর প্রাদুর্ভাব বেশি তারা জলপাই গাছের পাতার রস মাথার মধ্যে দিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে উকুনের প্রবণতা কমে যাবে। তার পাশাপাশি যাদের হঠাৎ করে জ্বর চলে আসে, জন্ডিস, কাশির মতো সমস্যা দেখা যায়, তারা জলপাই পাতার রস খেতে পারেন। এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতাঃ

যাদের অপারেশন হয়েছে, অপারেশনের ঘা পুরোপুরি না শুকানো পর্যন্ত জলপাই খাবেন না। পাশাপাশি যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারাও জলপাই খেতে সর্তকতা অবলম্বন করবেন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Comment